বজ্জাত দানব ও আগুন দেবতা – Bangla Fairy Tale

 

এক দানব আর এককৃষক, দুজনে পাশা খেলছিল। খেলায় চাষার হার হল। 

পাশায় হেরে চাষারতো মাথায় হাত! কারণ খেলবার আগে সে বাজি রেখেছিল যে, সে হারলে দানব তার ছেলেকে নিয়ে

যাবে। এখন উপায় কি হবে? ওদিকে দানব কিছুতেই ছাড়বে না। সে বলছে, ‘কালই এসে আমি তোমার ছেলে নিয়ে যাব। যদি তাকে রাখতে চাও, তবে এমন করে তাকে লুকিয়ে রেখে দাও, যাতে আমি খুঁজে বার করতে না পারি। খুঁজে পেলে কিন্তু আর তাকে ফেলে যাব না।’ এই না বলে বিকট হু হু হা হা হা অট্ঠাসি দিয়ে চলে গেলো। 

ওদিকে কৃষকের তো চিন্তায় মর মর অবস্থা, ছেলেটিকে কোথায় লুকোবে? যেখানেই রাখুক, দানব নিশ্চয় তাকে খুঁজে বার করবে। সে অনেক ভেবে কিছু বুঝতে না পেরে শেষে দেবতার রাজাকে ডাকতে লাগল। 

দেবতার রাজা তাঁর দুঃখ দেখে দয়া করে বললেন, ‘তোমার কোনোচিন্তা নেই। আমি তোমার ছেলেটিকে এমন করে লুকিয়ে দেব যে দানবের বাবাও তাকে খুঁজে বার করতে পারবে না।’ 

এই বলে তিনি ছেলেটিকে গমের ক্ষেতে নিয়ে গিয়ে তাকে একটা ছোট্র গমের ভিতরে লুকিয়ে রাখলেন। তার পরদিন দানব এসে কৃষকের ঘরে, বাগানে , পুকুরে, বাক্সে, উনুনে, হাঁড়িতে, হুঁকোর ভিতরে- কতই খুঁজল, কোথাও ছেলেটিকে দেখতে পেল না। 

কিন্তু সে এমনি পাজী দানব ছিল- সে তখনি বুঝে নিল যে, তবে নিশ্চয় গমের ক্ষেতে গমের ভিতরে লুকিয়ে রেখেছে! 

অমনি সে কাস্তে নিয়ে গিয়ে ঘ্যাঁশ ঘ্যাঁশ করে গম কাটতে লাগল! সব গম কেটে, তারপর তার এক-একটি করে দানা হাতে নিয়ে উলটেপালটে দেখে, সে দুদণ্ডের মধ্যেই ধরে ফেলল যে, এই গমটার ভিতর ছেলেটা বসে আছে। 

আর একটু হলেই সে সেই গমটার ভিতর থেকে ছেলেটিকে বার করে নিয়ে যেত এর মধ্যে দেবতার রাজা এসে তার হাত থেকে সেটা কেড়ে নিয়ে ছেলেটিকে তাড়াতাড়ি চাষার হাতে দিয়ে বললে, ‘আমর যা সাধ্য, আমি তা করেছি। এর বেশি আর পারব না।’ 

দানব ছেলেটিকে নিতে না পেরে খুব রেগে গিয়ে বলল, ‘হুম, আমাকে ফাঁকি দিলে? তবে আর ফাকি দিতে পারবে না, আমি কাল আবার আসব।’ 

দেবতার রাজা যখন পারলেন না, তখন চাষা আলোর দেবতার কাছে গেল। আলোর দেবতা এসে তার ছেলেটিকে একটি রাজহাঁসের গলায় পালক বানিয়ে রেখে দিলেন। কিন্তু তাতে কি সে দানবকে ঠকাবার জো আছে? সে এসেই হাঁসের গলা ছিঁড়ে সে পালকটি সুদ্ধ তাকে খেয়ে ফেলতে গেলো!ভাগ্যিস পালকটি তখন তার ঠোঁটে লেগে রইল, নইলে আর উপায়ই ছিল না। 

পালকাটকে দানবের ঠোঁটে লাগতে দেখেই আলোর দেবতা সেটিকে উড়িয়ে নিয়ে চাষার কাছে পৌঁছে দিলেন, আর বললেন, ‘আমি আর কিছু করতে পারব না।’ 

দানব সেদিনও ঠকে গেল, কিন্তু যাবার সময় বলে গেল, ‘কাল আবার আসব।’ 

দেবতার রাজা হেরে গেলেন, আলোর দেবতা হেরে গেলেন। তখন কৃষক আগুনের দেবতাকে ডেকে বলল, ‘ঠাকুর! আপনি আমার ছেলেটিকে বাঁচান!’ 

আগুনের দেবতা তখন ছেলেটিকে সমুদ্রে নিয়ে একটা মাছের পেটের মধ্যে তার একটি ডিমের ভিতরে লুকিয়ে রাখলেন। 

ওকিদকে বজ্জাত দানবটা কিন্তু এর সবই টের পেয়ে গেছে। আর তাই এবারে সে একটা ছিপ নিয়ে সমুদ্রের ধারে বসে মাছ মারতে লাগলো। সমুদ্রে কত কোটি কোটি মাছ, তার ভিতর থেকে সে সেই ডিমটাকে দেখতে দেখতে খুঁজে বার করল। 

তখন আগুনের দেবতা সেই ডিমটি তার হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে চুপিচুপি ছেলেটিকে বললেন, ‘শিগগির ঘরে পালিয়ে যা, ভেতরে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দিস।’ 

এ কথা তখন দানব শুনতে পায় নি। তারপর ছেলেটি পালিয়ে অনেক অনেক দূরে গেলে সে তাকে দেখতে পেল। অমনি ঘোঁত করে লাফিয়ে উঠে সে তার পিছু পিছু ছুটল। কিন্তু ছেলেটি ততক্ষণে ঘরে ঢুকে গিয়েছে। দানবটা তাকে ধরবার জন্য তাড়াতাড়ি গেল সেই ঘরে ঢুকতে। সে জানত না যে আগুনের দেবতা এর আগেই কখন সেই ঘরের দরজায় তিনহাত লম্বা এক লোহার খোঁচ বসিয়ে রেখেছেন। দানব রাগে ভূত হয়ে ঘরে ঢুকবার সময় সেই খোঁচ আগাগোড়া গেল তার মাথায় ঢুকে। তখন সে ভয়ানক চেঁচিয়ে চিৎপাত হয়ে পড়ে যেতেই আগুনের দেবতা ছুটে এসে তার একটা পা কেটে ফেললেন। 

কিন্তু পা কাটলে কি হবে? দুষ্ট দানব তাকে কি জাদুই করে রেখেছে- সেই কাটা পা তখনি এসে আবার জোড়া লেগে গেল! 

যা হোক, আগুনের দেবতা সেই দানবের থেকে বড় জাদুকর ছিলেন্‌ তিনি জানতেন যে কাটা জায়গায় লোহা আর পাথর ফেলে দিলে আর তা জোড়া লাগতে পারে না। কাজেই তিনি তাড়াতাড়ি দানবের আর একটা পা কেটেই লোহা আর পাথর দিয়ে কাটা জায়গা চাপা দিয়ে ফেললেন। তখন আর দানবের জাদু খাটল না, দেখতে দেখতে তার প্রাণ বেরিয়ে গেল। 

তখন ত কৃষকের খুবই আনন্দ হল। সে আগুনের দেবতাকে কত সালাম যে কারল, তা গুণে শেষ করা যায় না। তারপর থেকে সে সকলকে বলত যে, এই দেবতাটির মত দেবতা নেই।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url